মহানগর সময়নূর হোসেন ‘ইয়াবাখোর’ নয়, ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন: রাঙ্গা
সময় সংবাদ

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ ছিল এ কথা বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় একটি সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে, রাঙ্গা জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শহীদ নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা এ কথা জানান।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে নূর হোসেন মা বলেন, আমার ছেলে বুকে-পিঠে লেখে রাজপথে নামলো দেশের জন্য, জনগণের জন্য। কীসের জন্য নামলো? ও কি পাগল ছিল, ওর কি জ্ঞান, বিচার ছিল না? আজ ৩০ বছর পরে ওরে নেশাখোর বলা হলো। আমি এ বিচারের দায়ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। জনগণের কাছে তাকে (মসিউর রহমান রাঙ্গা) ক্ষমা চাইতে হবে। এসময়, নূর হোসেনকে নিয়ে করা মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান বড় ভাই আলী হোসেনও।
জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়ে তাকে বয়কটের কথা বলেন তিনি।
নূর হোসেনকে নিয়ে দেয়া বক্তব্য তার নিজের না দলীয়—জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমি জাপার মহাসচিব। আমি যা বলি, দলের পক্ষেই বলি। আমার কি ব্যক্তিগত কোনও বিষয় আছে? নূর হোসেনের সঙ্গে তো আমার জমি জমা সংক্রান্ত কোনও ঝামেলা ছিল না।
আপনি নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবেন কিনা’—সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে যারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি বলে দিয়েছি। ‘ইয়াবাখোর’, ফেনসিডিলখোর’ শব্দ দুটি স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। এই শব্দগুলো আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। নূর হোসেন ইয়াবা, ফেনসিডিল খেত এ কথাটি বলার জন্য আমি তার পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, রোববার (১০ নভেম্বর) বনানীতে জাপার চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’-এর এক আলোচনা সভায় রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন? নূর হোসেনকে? কে নূর হোসেন? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’
রাঙ্গা বলেন, ‘আমি গতকাল বলেছিলাম, নূর হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল। সেটা আমার স্লিপ অব টাং হয়ে গিয়েছিল। আমি স্বীকার করছি, তখন ফেনসিডিল-ইয়াবা পাওয়া যেতো না। সুতরাং এই দুটি শব্দের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
নূর হোসেনের বুকেপিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, এসব কথা তো আপনি আপনার বুকে আঁকতে বা লিখতে পারেন না। কেউ না কেউ এটা লিখে দিয়েছে। একজন সুস্থ প্রকৃতির মানুষ এটি কোনও সময় করতে পারেন না। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এটা কেউ না কেউ সাবোটাজ করেছে। একটা লাশের দরকার ছিল। সেটা তারা করেছে। একইভাবে আমরা ডাক্তার মিলন হত্যারও প্রতিবাদ করেছি। তাকেও পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতির আলোচনা।
নূর হোসেনের পরিবার আপনার (রাঙ্গা) বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে--এ প্রসঙ্গে জাপা মহসচিব বলেন, এখন তারা মামলা করলে করতে পারে। মামলা তো যে কেউ করতে পারেন। দেশে আইন-কানুন তো আছেই।